প্রকাশিত: ২৭/০৯/২০১৮ ১১:০৯ পিএম

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা বলছেন, বিগত ৩ দশক ধরে মিয়ানমার সরকার এবং দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণসহ গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অমানবিক কাজে মিয়ানমার সেনাবাহিনী চীনের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের প্রতিও বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের বৈদেশিক নীতি কমিটির শুনানিতে দেশটির আইন প্রণেতারা এমন মতামত ব্যক্ত করেন। কমিটির চেয়ারম্যান ইডি রয়েসের নেতৃত্বে ‘জেনোসাইড এগেইনসড দ্য বার্মিস রোহিঙ্গা’ শীর্ষক শুনানিটি ২৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

ওই শুনানিতে এক ডজনেরও বেশি মার্কিন আইন প্রণেতা অংশ নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন। এছাড়াও ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক গ্রিটা ভ্যান সাসটারেন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রোগাম পরিচালক স্টেফেন পমপার ওই শুনানিতে অংশ নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার আইন প্রণেতা ডানা রোরাবাকের শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী যেসব অস্ত্র দিয়ে রোহিঙ্গা নিধন করছে, রাখাইনে গণহত্যা চালাচ্ছে, চীন সেসব অস্ত্রসস্ত্র সরবরাহ করছে। মিয়ানমার সরকার চীনের কাছ থেকে নেওয়া এসব অস্ত্র দিয়ে গত ৩ দশক ধরে রাখাইনে গণহত্যা চালাচ্ছে। এই বিষয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। চীনের বিরুদ্ধেও আমাদের নিষেদাজ্ঞা জারি করতে হবে।’

এসময়ে কমিটির চেয়ারম্যান ইডি রয়েস বলেন, ‘অবশ্যই চীন এসব অস্ত্র মিয়ানমারকে সাপ্লাই দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, চীন একদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে এসব অস্ত্র দিচ্ছে, আবার অন্যদিকে, মিয়ানমারে অনেক ছোট ছোট জাতিগত দল আছে, চীন সেসব দলকেও অস্ত্র সরবরাহ করছে। যা খুবই ভয়াবহ।’

ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফারনান্দো ভ্যালির আইন প্রণেতা ব্রাড সেরম্যান বলেন, ‘মিয়ানমারের এই গণহত্যার জন্য অং সান সুকিও দায়ি। গণহত্যায় জড়িত মিয়ানমারের সেনাদের পক্ষে চীন শক্তি যোগাচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক।’

নেভাদা’র আইন প্রণেতা ডিনা তিতাস বলেন, ‘চীন ধারাবাহিকভাবে মিয়ানমারকে অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে। আর মিয়ানমার সেই অস্ত্র দিয়ে মানুষ হত্যা করছে। কোথায় বিশ্ব বিবেক? চীন কোন স্বার্থে এই অপকর্মে উৎসাহ যোগাচ্ছে?’

এমন সময়ে নেভাদা’র আইন প্রণেতা ডিনা তিতাসের এক প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রোগাম পরিচালক স্টেফেন পমপার বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন শুরু থেকেই নেতিবাচক কাজ করছে। এই বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নিতে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে চীন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছে।’

পেনসেলভেনিয়ার আইন প্রণেতা স্কট পেরি বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বৈশ্বিক নিষেধ্বাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু এই সেনাদের চীন সমর্থন করায় মিয়ানমারের সেনারা বিশ্বকে পাত্তা দিচ্ছে না। তাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার এখন সময় এসেছে।’

টেক্সাসের আইন প্রণেতা মাইকেল ম্যাককল বলেন, ‘গণহত্যার মতো নৃশংস কাজে মিয়ানমারকে অস্ত্র দিয়ে চীন যেভাবে উৎসাহ যোগাচ্ছে, তা হতাশাজনক।

‘জেনোসাইড এগেইনসড দ্য বার্মিস রোহিঙ্গা’ শীর্ষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের বৈদেশিক নীতি কমিটির শুনানিতে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন এবং সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে আশ্রয় নেওয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

এ ছাড়া ওই শুনানিতে রোহিঙ্গা ইস্যূতে বাংলাদেশের অবস্থান, মুসলিম বিশ্বের অবস্থান ও উদ্যোগ, আসিয়ানের অবস্থানসহ সার্বিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি আলোচনা করা হয়।

সারাবাংলা

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিভাগ এবং ইউএসএআইডিয়ের মাধ্যমে কক্সবাজার, ভাসানচর এ অঞ্চলের ...